Top Ad unit 728 × 90

Breaking News

সংবাদ

কেমন ছিল প্রিয় নবীর বিশ্বস্ততা


জনপ্রিয় অনলাইন: আমানত শব্দটি আরবি হলেও আমাদের কাছে এর অর্থ অনেক পরিচিত। সাধারণত কারো কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ, বস্তু-সামগ্রী গচ্ছিত রাখাকে আমরা আমানত বুঝি। কিন্তু আমানতের প্রায়োগিক ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, তথা মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষার ভিন্ন ভিন্ন অনুষঙ্গ রয়েছে। তাই ইসলামে আমানত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা যাদের সফলতার স্বীকৃতি দিয়েছেন তাদের অন্যতম হলেন—যারা আমানতের ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৮)
আমানত রক্ষা করা নবীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ গুণ। এই গুণের শ্রেষ্ঠ অধিকারী ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাইতো তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির আগে সবার কাছে ‘আল আমিন’ তথা বিশ্বস্ত হিসেবে উপাধি পেয়েছিলেন।

প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের কাছে প্রিয় নবীর আমানতের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরব। ইনশাআল্লাহ।
নবুয়ত প্রাপ্তির কয়েক বছর আগের ঘটনা। কুরাইশরা নতুন করে কাবাঘর নির্মাণের  সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় কাবাঘরে হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলো। কুরাইশদের গোত্রপ্রধান আবু উমাইয়া বিন মুগিরা বললেন, সবার আগে যে মসজিদের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে-ই প্রথমে হাজরে আসওয়াদ ওঠাবে। আর সে সময় দরজা দিয়ে প্রথমে প্রবেশ করেছিলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সবাই দেখে একবাক্যে বলে উঠলেন, আমরা এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যস্থতায় তা নিরসন করতে চাই। (উমদাতুল কারী ৯/২১৭)
অন্যের গচ্ছিত আমানত রক্ষায় রাসুল (সা.) ছিলেন সদা সচেষ্ট ও যত্নবান। হিজরতের রাতের কথা কে না জানেন! মক্কাবাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যে রাতে নবীজি মদিনার পথে হিজরত করেছিলেন, সে রাতে নিজের কাছে রাখা অনেকের সংরক্ষিত আমানত নবীজির প্রিয় সাহাবা, চাচাতো ভাই আলী (রা.)-কে বিছানায় রেখে গিয়েছিলেন। যাতে তিনি প্রাপ্য ব্যক্তিদের কাছে তাদের আমানত যথাযথভাবে পৌঁছে দেন।
এই মর্মে আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হিজরতের রাতে নবীজি (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে মক্কায় অবস্থান করে নবীজির কাছে রাখা আমানত প্রাপ্য ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। (সুনানুল কুবরা-বাইহাকি, হাদিস : ১২৬৯৬)
মুসলিম-অমুসলিম সবাই নবীজির আমানতদারি তথা বিশ্বস্ততার ব্যাপারে খুব ভালো করেই জানত।
একবারের ঘটনা, সাহাবি আইশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরনের দুটি মোটা কিতরি কাপড় ছিল। যখন তিনি বসতেন তখন তাঁর দেহের ঘামে কাপড় দুটি ভিজে ভারী হয়ে যেত। একবার কোনো এক ইহুদির সিরিয়া থেকে কাপড়ের চালান এলে আমি বললাম, আপনি যদি তার কাছ থেকে সুবিধামতো সময়ে মূল্য পরিশোধের শর্তে লোক পাঠিয়ে একজোড়া কাপড় কিনে নিতেন। তিনি তার কাছে লোক পাঠালেন। ইহুদি বলল, আমি জানি সে (মুহাম্মদ) কী করতে চায়। সে আমার মাল অথবা নগদ অর্থ হস্তগত করার পরিকল্পনা করছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার ভালো করেই জানা আছে যে ‘তাদের মধ্যে আমি বেশি আল্লাহভীরু এবং সবচেয়ে বেশি আমানত  ফেরতদাতা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২১৩)
বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কথাটি ছিল—যা তিনি বারবার বলছিলেন, ‘হে আমার সাহাবারা! আল্লাহ তাআলা ওহি পৌঁছানোর যে আমানত আমাকে দিয়েছেন। আমি কি তা তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পেরেছি?’ উপস্থিত সবাই  বললেন—আপনি তা পরিপূর্ণরূপে পৌঁছিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারিতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, বিদায় হজের ভাষণে নবীজি বলেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো। আজকের এ দিনের মতো, এ শহরের মতো এবং এ মাসের মতো আল্লাহ তাআলা তোমাদের রক্তকে ও তোমাদের সম্পদকে তোমাদের ওপর হারাম করেছেন। বলো তো, আমি কি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি?’ সমবেত সবাই বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। এ কথা তিনবার বললেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৪০৩)
নবীজি নিজেও যেমন আমানত আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান ছিলেন, তেমনি সরকারি কর্মকর্তাদের আমানত আদায়েও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন।
বিখ্যাত সাহাবি আদি ইবনে উমাইরাহ আল-কিন্দি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তিকে আমাদের সরকারি কোনো পদে নিয়োগ করার পর সে যদি আমাদের তহবিল থেকে একটি সুই কিংবা তার বেশি আত্মসাৎ করে তবে সে খেয়ানতকারী। কিয়ামতের দিন সে তার এই খেয়ানতের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮১)
সুতরাং, প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের আমানতের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান এ দুঃসময়ে জনগণের আমানত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
আল্লাহ আমাদের যথাযথ আমানত রক্ষার তৌফিক দান করুন।

কেমন ছিল প্রিয় নবীর বিশ্বস্ততা Reviewed by JONOPRIO24 on ১১:৪৯:০০ PM Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

All Rights Reserved by স্পেনে অফিসিয়াল তথ্য © 2014 - 2015
Powered By Blogger, Shared by Free WP Themes

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.